চাকরির জন্য ৩০-৩৫ বছর বয়সের সীমাবদ্ধতায় আমি বিশ্বাসী নই। আমি মনে করি বয়স উন্মুক্ত থাকা উচিত। এই নিয়ম শুধুমাত্র সীমিত বয়সসীমার প্রাচীর তুলে না, বরং আমাদের সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয় এবং সমাজে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
বয়স উন্মুক্ত রাখার ফলে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট আসবে:
১. বেকারত্বের হার কমবে এবং শ্রমঘণ্টার অপচয় বন্ধ হবে:
বর্তমানে, বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার পর অনেকেই বসে থেকে জব প্রিপারেশন নেয়, কারণ চাকরির জন্য বয়সসীমা এবং প্রতিযোগিতার চাপে তারা তাড়াহুড়া করে প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হয়। যদি বয়স উন্মুক্ত রাখা হয়, তবে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর সঙ্গে সঙ্গে কোনো একটি চাকরিতে যোগ দিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি ধীরে ধীরে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে। এতে শ্রমঘণ্টার অপচয় রোধ হবে, কারণ তারা বসে থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট না করে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে দক্ষ করে তুলবে। এইভাবে, আমাদের দেশের মানবসম্পদ আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার হবে।
২. দক্ষতার আদান-প্রদান বাড়বে এবং পেশাগত পরিসর বিস্তৃত হবে:
বয়স উন্মুক্ত থাকার ফলে কেউ হয়তো ৫ বছর বেসরকারি চাকরি করার পর মনে করবে যে এটি তার জন্য উপযুক্ত নয়, তখন সে সরকারি চাকরিতে ঢোকার চেষ্টা করতে পারবে। আবার কেউ হয়তো সরকারি চাকরি করার পর বুঝবে যে বেসরকারি খাতে তার জন্য বেশি সুযোগ রয়েছে। এইভাবে এক ক্ষেত্র থেকে অন্য ক্ষেত্রে দক্ষতার আদান-প্রদান ঘটবে এবং পেশাগত অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধি ঘটবে। ফলে সার্বিকভাবে দেশটি দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বাড়বে এবং শ্রমবাজার আরও শক্তিশালী হবে।
“৫০ বছর বয়সে কেউ কি সহকারী পরিচালক হতে চাইবে?”
হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন আসবে—”ভাই, তাহলে তো অনেকেই ৫০ বছর বয়সে সহকারী পরিচালক হতে চাইবে!” কিন্তু, যদি ৫০ বছর বয়সে কেউ জুনিয়র পোস্টে ঢুকতে চায় এবং সেই অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে, তবে আপনার সমস্যা কী? যদি কেউ ৫০ বছর বয়সে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একটি সরকারি চাকরি পেতে সক্ষম হয়, তবে তাকে তরুণের মর্যাদা দিতে সমস্যা কোথায়? এই বয়সে এসে তিনি যদি একজন তরুণের মতো উদ্যম ও দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন, তাহলে তাকে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত।
পড়াশোনা ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন:
৫০ বছর বয়সে এসে যদি কেউ পড়াশোনা ও পরিশ্রম করে ২৫ বছরের একজনের সাথে প্রতিযোগিতা করে সরকারি চাকরিতে টিকে যায়, তাহলে তা তার দক্ষতা এবং মনোবলের প্রতিফলন। এটি একদিকে যেমন তার মেধার স্বীকৃতি হবে, অন্যদিকে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
অতএব, বয়স উন্মুক্ত রাখার ফলে সমাজের কোন অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং এটি আরও বেশি দক্ষ, উদ্যমী এবং শ্রমশীল কর্মীদের গড়ে তুলবে। আমরা যদি সত্যিই পরিবর্তন চাই, তবে বয়সের বাধাকে আরোপ করে আমরা কেবল সম্ভাবনাকে রুদ্ধ করছি। সমাজের উন্নয়নের জন্য আমাদের উচিত বয়সের চেয়ে মেধা, যোগ্যতা, ও দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া।
লেখকঃ রবিউল ইসলাম লুইপা
৩৫তম বিসিএস কর্মকর্তা