ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকারের অংশ হলেন ঢাবির দুই শিক্ষার্থী।

স্টাফ রিপোর্টারঃ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তারা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছাত্রবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের অংশ হয়ে তাঁরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এর পূর্বে কখনো কোনো ছাত্র বা এত স্বল্প বয়সী কেউ সরকারের অংশ হননি।

ঢাকার বনশ্রীর ছেলে নাহিদ ইসলাম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আসিফ মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লায়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা পরিচালিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন নাহিদ ইসলাম। এরপর এই আন্দোলন আরও গতিশীল হলে আসিফ মাহমুদসহ অন্যরাও আলোচনায় আসেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে সরকার প্রথম দফায় কারফিউ জারি করার পর নাহিদ ও আসিফসহ আরও কয়েকজন সমন্বয়ককে তুলে নেওয়া হয়েছিল। দুই দিন পর যখন নাহিদকে একটি রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়া হয়, তখন তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিল আঘাতের চিহ্ন। আর আসিফকে ধরে নিয়ে বিশেষ কোনো ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন।

বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এই দুই সমন্বয়ক রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে এই দুজনসহ আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে তুলে এনেছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে আরও তিনজন সমন্বয়ককে ধরে এনে ডিবি অফিসে কয়েক দিন আটকে রাখা হয়। সেই অবস্থায় নাহিদকে দিয়ে একটি ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

নানামুখী চাপের মুখে এক পর্যায়ে এই সমন্বয়কদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল ডিবি। বেরিয়ে তাঁরা নতুন করে আবার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং এর ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে সরকার পতনের ডাক দেন। তাঁদের গণভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশ পরিচালনায় নতুন এই সরকার গঠন হচ্ছে।

এই সরকারের উপদেষ্টা হওয়া নাহিদ ও আসিফ দুজনই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা। নাহিদ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আর আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। আসিফ এর আগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ছিলেন। নানা অভিযোগ তুলে গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন ২১ জন নেতা। তাঁদের উদ্যোগেই গত বছর অক্টোবরে গঠিত হয় ছাত্রশক্তি। এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *